হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণ
জার্মান চিকিৎসাবিদ ডাক্তার ক্রিস্টীয়ান ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিমান এই চিকিৎসা পদ্ধতির জনক। হোমিওপ্যাথি হলো এক ধরনের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি যার মুলমন্ত্র হলো ''Treat the patient, not the disease'' যার অর্থ হলো ''রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা করুন''।
১৭৯৬ সালে ডাক্তার স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের হাত ধরে এই
চিকিৎসা পদ্ধতির উৎপত্তি হয়।হোমিওপ্যাথির অনেক সুনাম থাকলেও মানুষের মধ্যে রয়েছেে
এর সম্পর্কে নানা রকম ভুল ধারনা। চলুন আজ আমরা জানব বিশূদ্ধ এই চিকিৎসা পদ্ধতি
সম্পর্কে আমাদের কত শত ভুল ধারণা রয়েছে।
হোমিওপ্যাথি কিভাবে কাজ করে
আজকাল নাপা নামক এলোপ্যাথি এই ওষুধ টী যেন আমাদের জাতীয় ওষুধে পরিণত হয়েছে।জ্বর
থেকে শূরু করে মাথা ব্যাথা যাই হোক না কেন আমরা একটা নাপা খেয়ে নেই। লক্ষ্য
করুন,আমরা একটা নির্দিষ্ট রোগ কে কেন্দ্র করে নাপা অথবা প্যারাসিটামল গ্রহণ
করি।কিন্তু আগেই বলেছি হোমিওপ্যাথি রোগ নয় রোগির চিকিৎসা করে। নাপা বা
প্যারাসিটামল গ্রহন করলে প্রাথমিকভাবে শূধুমাত্র আমাদের জ্বর কমে। কিন্তু একবার
ভাবুন তো এরপরও যদি আপনার জ্বর না কমে তাহলে ডাক্তার আপনাকে কত গুলো টেস্ট ধরিয়ে
দেয়?
কিন্তু হোমিওপ্যাথি, রোগীর জ্বরের পিছনের ''Root cause'' অর্থাৎ মুল কারন খুজে
বের করে।এক্ষেত্রে রোগীর মানষিক লক্ষ্যনের উপর বেশী গুরুত্বারোপ করা হয়।হোমিও
ওষূধ মানব শরীরের যে বিষয় টির উপর বেশী কাজ করে তা হলো ''Vital force'' বা যাকে
আমরা সহজ ভাষায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলি।যদিও হোমিওপ্যাথির ভাষায় Vital force এর
শাব্দিক অর্থ সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বোঝায় না। তবে শব্দ দুটি অনেকটাই
কাছাকাছি যায়। আমি আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে সহজ করে দিলাম।
মানব শরীর রোগাক্রান্ত হলে সর্বপ্রথম কেস টেকিং এর মাধ্যমে রোগীর মানষিক এবং
শারিরীক সকল তথ্য নেওয়া হয়।অতঃপর অতি বিচক্ষনতার সাথে চিকিৎসক প্রায় ছয় হাজার
ওষুধের মধ্য থেকে শুধুমাত্র একটি ওষুধ রোগীর জন্য নির্বাচন করেন। এবং এভাবেই
হ্যানিম্যান তার হোমিওপ্যাথির মূলনিতী বই অরগানন অফ হোমিওপ্যাথি বই তে ডাক্তার
বাবুদের চিকিৎসা করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।কিন্তু কিছু ডাক্তার নামধারী অসাধু
ব্যাবসায়ী এই নিতী অনুসরন না করে ইচ্ছে মত ওষুধ প্রয়োগ করে।
হোমিও ওষুধ কি আসলেই পানি?
আগেই বলেছি হোমিওপ্যাথি তে প্রায় ছয় হাজার ওষুধ রয়েছে।অনেকের একটি ভুল ধারনা,
হোমিও ওষুধ কোন কাজের নয় অথবা এটা একটা ভাওতাবাজি চিকিৎসা। আমরা সাধারনত হোমিও
ওষুধ দুই ভাবে চিনে থাকি, আর তা হলো গ্লবিউলস বা চিনির তৈরি বটিকার আকারে এবং
তরলকারে। তাই অনেকেই ভেবে থাকেন হোমিও শুধু এই দুই এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আসলে তরলাকার যে ওষুধ টি আমরা দেখি সেটিই মুলত আসল ওষুধ।উদাহরন স্বরুপ ,একটি
হোমিও ওষুধের নাম জানা যাক। যেমন ধরুন ''সাইলিসিয়া'' ।বালুকনা থেকে প্রস্তুত এই
হোমিও ওষুধ টির রয়েছে হাজারো ক্রিয়াশীল দিক। হোমিওপ্যাথি ল্যাবে এলকোহলের সাথে
নির্দিষ্ট পরিমাণে বালুকনা মিশিয়ে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঝাকির মাধ্যমে প্রস্তুত হয়
সাইলিসিয়া মাদার টিনচার। তারপর একই প্রক্রিয়ায় বার বার ঝাকির মাধ্যমে সুক্ষ করনের
মাধ্যমে তৈরি হয় হোমিও ওষুধ। একইভাবে নাক্স ভমিকা, সালফার,ফসফরাস এইরকম আর অনেক
হোমিও ওষুধ মূল উপাদানের সাথে এলকোহলের মিশ্রনে হোমিওপ্যাথি ল্যাবে তৈরি করা
হয়।
হোমিওপ্যাথি তে সূক্ষ্ম নিতীর সুবিধা
আমরা অনেকেই ট্রেইনের বিশাল বগি কে একটা মেশিনের সাহায্যে েএকটা মানুষ কে
টানটে দেখেছি। কখনো কি ভেবেছেন? এতো বিশাল একটী ট্রেইনের বগি কে কিভাবে একটা
ক্ষুদ্র মানুষ টানতে পারে? কারন ওইখানে সূক্ষনিতীর প্রয়োগ করা হয়েছে।হোমিওপ্যাথিও
আমাদের স্থুল শরীরে ঠিক এইরকম সুক্ষ্মভাবে কাজ করে।
আমি আগেই বলেছি যেহেতু ল্যাবে মূল উপাদানের সাথে এলকোহলের মিশ্রনে বার বার ঝাকির
মাধ্যমে এটি তৈরি হয় সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি কতটা সুক্ষ্মভাবে আমাদের শরীরে কাজ
করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url