ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনের প্রাকৃতিক উপায়
ইনসুলিন ছাড়াও কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? এই প্রশ্ন যেন এখন আমাদের অনেকের মনে। উত্তর হলো হ্যাঁ সম্ভব, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে ইনসুলিন ছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক খাবার এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন এর মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আমাদের শুধুমাত্র বডি মেকানিজম টি বুঝতে হবে, যা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছে।চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই গোপন তথ্য।
পেজ সূচীপত্রঃ
ইনসুলিন কি
প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের প্রথমত জানতে হবে মানবদেহে ইনসুলিনের ব্যবহার। কারণ ইনসুলিন ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় একটি ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন যা রক্তে গ্লূকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। ইনসুলিন মূলত আমাদের মানব দেহ সৃষ্টি করে। আমরা যদি ইনসুলিন কৃত্রিমভাবে না নিয়ে আমাদের মানবদেহে এর উৎপাদনশীলতা প্রাকৃতিক ভাবেই বাড়িয়ে দিতে পারি তাহলে আমাদের কৃত্রিম উপায়ে ইনসুলিন দেহে প্রবেশ করাতে হবে না।
প্রথমেই বলেছি ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। গ্লুকোজ হল কোষের খাদ্য, ইনসুলিন এই গ্লুকোজ কে রক্তের সঙ্গে মিশতে দেয় না। গ্লূকোজ রক্তে মিশতে না দিয়ে কোষে পৌঁছানোর কাজ করে থাকে এই ইনসুলিন। যখন পরিমিত হারে ইনসুলিন আমাদের দেহ তৈরি করতে পারেনা তখন আমাদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তা রক্তে মিশে ডায়াবেটিস এর সূত্রপাত ঘটায়।
গ্লূকোজ কি?
আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই তা থেকে গ্লূকোজ বিভিন্ন রুপে আমাদের শরীরে উৎপন্ন হয়। যেমন দুধ থেকে ল্যাকটোজ, ফল থেকে ফ্রুকটোজ এবং চিনি বা শর্করা থেকে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়। এই গ্লূকোজ আমাদের দেহের জন্য উপকারী একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান। এর মাধ্যমে আমাদের শক্তি উৎপাদন হয়। কিন্তু তা সঠিক মাত্রায় কোষে প্রবেশের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। কারণ গ্লূকোজ রক্তের সঙ্গে মিশে গেলে ডায়বেটিসের সূত্র পাত ঘটে। তাই শরীরে সঠিক মাত্রায় এবং প্রাকৃতিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদন হতে হবে।
ডায়বেটিসের ধরন
ডায়বেটিস কে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি।
- টাইপ ওয়ান
- টাইপ টু
- গর্ভাবস্থায় বা যেস্টেশনাল ডায়বেটিস
- আদারস টাইপ অফ ডাইবেটিস
- টাইপ ওয়ান ডাইবেটিসঃ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি মতে যাদের পেনক্রিয়াস বা অগ্নাশয় একেবারেই ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাদের টাইপ ওয়ান ডাইবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু খিদমাপ্যাথি বা ভেষজ গবেষকগন বলে থাকেন যে টাইপ ওয়ান ডাইবেটিস রোগীদেরও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহনের মাধ্যমে এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে অগ্নাশয় সুস্থ করে প্রাকৃতিক ভাবেই ইনসুলিন উৎপাদন করা সম্ভব।
- টাইপ টু ডাইবেটিসঃ আপনারা বুঝতেই পারছেন যদি প্রাকৃতিক খাদ্যের মাধ্যমে টাইপ ওয়ান রোগীদের ইনসুলিন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায় তবে তাইপ টু ডাইবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয় টি অনেক সহজ এবং তারা খুব সহযেই আরোগ্য লাভ করবে।
- যেস্টেশনাল ডায়বেটিসঃ এটি গর্ভকালীন অবস্থায় সৃষ্টি ডায়বেটিস। এক্ষেত্রে রোগীকে একটু কোঠর ডিসিপ্লিনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গর্ভপাতের পর পরিমিত ব্যায়াম, সঠিক ডায়েট চার্ট এবং প্রাকৃতিক খাদ্যের একটি নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের মাধ্যমেই কেবল এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- আদার স্পেসিফিক টাইপ অফ ডাইবেটিসঃ এটি বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে।যেমনঃ হরমোনাল ইম্ব্যালেন্সের কারনে, ড্রাগ নেওয়া থেকে, অগ্নাশয়ের ইনফেকশনের কারনে, থাইরয়েড রোগের কারনে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মূল রোগের চিকিৎসা করার পাশাপাশি ভেষজ এর সহয়তা নেওয়া যেতে পারে।
শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনে প্রাকৃতিক খাদ্য
আমদের দেহে প্রাকৃতিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদনে যে ইন্টারনাল অর্গান টি ভুমিকা পালন করে তার নাম হলো অগ্নাশয়। পুষ্টিবীদদের মতে অগ্নাশয় কেবল তখনই ইনসুলিন উৎপাদন করবে যখন আমরা তেতো জাতীয় কোন খাবার গ্রহন করব। যেমন - উচ্ছে বা করলা। এটি আমরা প্রায়শই সবজি হিসেবে গ্রহন করি। কিন্তু এটি শুধুমাত্র আমাদের ডায়বেটিস প্রতিরোধ করতে সহয়তা করবে। কিন্তু প্রতিকারের জন্য আমাদের আরো মুল্যবান কিছু ভেষজ গ্রহন করতে হবে।
সময়ের কাল ক্রমে আমরা প্রকৃতি থেকে যেমন দূরে সরে এসেছি তেমনই আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি। আমরা প্রতিনিয়ত কেমিকেল জাতীয় কিছু ওষুধের দাস হয়ে পড়ছি।
আমাদের অগ্নাশয় কে সুস্থ রাখতে এবং প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য এবং ডায়বেটিস মুক্ত জীবন যাপন করার জন্য বেশ কিছু প্রাক্রিতিক ভেষজ সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। যেমন - জামবীজ, গুলঞ্চলতা, কালোজিরা, রসুন, আমলকি, চিরতা, দারচিনি, গুমারপাতা, মেথী, অশ্বগন্ধা শিকড়, সোমরাজ,আদা শুঠ,জটামাংশী ইত্যাদি মুল্যবান ভেষজ আমাদের অগ্নাশয় সুস্থ করে প্রাকৃতিক ভাবে ইনসুলিন উৎপাদনে সক্ষম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url